Job
তথ্য প্রযুক্তি - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি - হার্ডওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণ

কম্পিউটার সিস্টেমের বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যারসমূহ রক্ষণাবেক্ষণের পদ্ধতিকেই বলা হয় হার্ডওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণ
মাইক্রোকম্পিউটারের প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারসহ অন্য সফটওয়্যারগুলো সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন যথার্থ ও সঠিক হার্ডওয়্যার প্রয়োজন। সামঞ্জস্যপূর্ণ হার্ডওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারসহ অন্যান্য সফটওয়্যার পরিচালনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া কম্পিউটারের স্পিড অনেকাংশে নির্ভর করে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারের ওপর। অধিকাংশ মাইক্রোকম্পিউটার সিস্টেমকেই নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারকে দ্রুত নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। প্রতিনিয়ত নিয়ন্ত্রিত রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবহারব্যবস্থাটি কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন হার্ডওয়্যারকে ডেটা নষ্ট বা হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। তাই একটি কম্পিউটার সিস্টেমকে সুচারুভাবে পরিচালনা করতে হলে সঠিকভাবে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন। সঠিকভাবে হার্ডওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণের ফলে কম্পিউটার সহজে নষ্ট হয় না, বেশিদিন নিরাপদে চলে, কম্পিউটার পরিচালনার মোট খরচ কমে যায়, উপাত্তসমূহ সহজে হারিয়ে যায় না এবং আনুষঙ্গিক হার্ডওয়্যার যন্ত্রপাতিসমূহ বেশিদিন টিকে থাকে। একটি কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারসমূহকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বা নিয়ামকগুলোর প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে।

১. ধুলাবালি মুক্ত পরিবেশঃ কম্পিউটারকে ভালো রাখতে হলে ধুলাবালি মুক্ত পরিবেশে কম্পিউটার ব্যবহার করতে হবে। কেননা ধুলাবালি কম্পিউটারের মাদার বোর্ডেসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের ক্ষতি করে থাকে। সার্কিটের উপর ধুলাবালি জমে শর্ট সার্কিট সৃষ্টি হয়। এছাড়া তাপ অপসারণ ক্ষমতা কমে যায়। অনেক সময় সার্কিট অচল বা নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ ধুলাবালি। ধুলাবালি মুক্ত পরিবেশের জন্য যা করতে হবে তাহলো-

  • কম্পিউটার কক্ষের দরজা ও জানালায় ভালো পর্দা ব্যবহার করা।
  • কম্পিউটার কক্ষে জুতা ছাড়া প্রবেশ করা।
  • কম্পিউটার কক্ষের মেঝে সবসময় পরিষ্কার রাখা।
  • কম্পিউটার মেঝে থেকে কিছুটা উপরে রাখা।

২. সঠিক বৈদ্যুতিক পরিবেশঃ কম্পিউটার ভালো রাখতে হলে সঠিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যুৎ এর ভোল্টেজ উঠা-নামা, ত্রুটিপূর্ণ সংযোগ, লোডশেডিং ইত্যাদি কম্পিউটারের জন্যে খুবই ক্ষতিকর। কম্পিউটারের সঠিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হলে-

  • ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করতে হবে। ইহা বিদ্যুতের ভোল্টেজ উঠা-নামা করলেও সঠিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করবে।
  • ইউপিএস ব্যবহার করতে হবে। UPS মানে হলো Uninterrupted Power Supply. ইহা বিদ্যুৎ না থাকলেও ১০ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত কম্পিউটার চালু রাখতে সক্ষম।
  • ভালো মানের ক্যাবল ব্যবহার করতে হবে। যাতে নিরাপদ বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়।
  • ভালো মানের মাল্টি প্লাগ ব্যবহার করতে হবে। মাল্টি প্লাগের সংযোগ যেন লুজ বা ঢিলে ঢালা না থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কেননা এতে শর্ট সার্কিট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • কম্পিউটার ব্যবহারের পর সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্চিন্ন করে রাখতে হবে।

৩. পোকা মাকড় থেকে সাবধান থাকাঃ পিঁপড়ে, তেলাপোকা এবং অন্যান্য পোকামাকড় কম্পিউটারের মধ্যে বাসা বাঁধতে পারে। ফলে শর্ট সার্কিটসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও এরা তার কেটে ফেলতে পারে। এদের হাত থেকে বাঁচতে হলে-

  • মিষ্টি জাতীয় খাবারসহ যেকোন খাবার কম্পিউটার কক্ষে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • কম্পিউটারের আশেপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • পোকামাকড়ের উপস্থিতি টের পেলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. পরিষ্কারকরণঃ নির্দিষ্ট সময় পর পর কম্পিউটারের মাদারবোর্ড ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ খুলে ব্রাশ বা সুবিধা মত জিনিস দিয়ে ধুলাবালি পরিষ্কার করতে হবে। নিজে না পারলে কম্পিউটার মেরামতের দোকানে বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাহায্য নিতে হবে। কম্পিউটার পরিষ্কার থাকলে এর কাজের গতি বৃদ্ধি পায় এবং যন্ত্রাংশ ভালো থাকে।

৫. ল্যাপটপের ক্ষেত্রে বিশেষ যত্নঃ ডেস্কটপের তুলনায় ল্যাপটপ ব্যবহারকারীদের কিছু বিশেষ যত্ন নিতে হয়। যাতে ল্যাপটপের কার্যকারিতা ঠিক থাকে। এজন্য যা করতে হবে-

  • কুলিং ফ্যান ব্যবহার করা। দীর্ঘসময় ল্যাপটপ ব্যবহার করার ফলে এর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় যা নিয়ন্ত্রণ করতে কুলিং ফ্যান সাহায্য করে।
  • ল্যাপটপের প্রধান সমস্যা হলো ব্যাটারি চার্জ কম থাকা বা না থাকা। ব্যাটারি ভালো রাখতে হলে কম্পিউটার ব্যবহারের সময় চার্জ দিতে হবে এবং চার্জ ফুল হয়ে গেলে চার্জার খুলে নিতে হবে। ব্যাটারির চার্জ ৫০% থাকা অবস্থায় আবার চার্জ দেওয়া। কখনও চার্জ একেবারে খালি করে পিসি বন্ধ রাখা রাখা উচিত নয়। কমপক্ষে ২০% চার্জ থাকা অবস্থায় বন্ধ রাখা উচিত।
  • পানি থেকে ল্যাপটপ দূরে রাখা। টেবিলে খাওয়ার পানি কিংবা ব্যাগে বহনের সময় বৃষ্টির পানি থেকে ল্যাপটপকে নিরাপদে রাখতে হবে।
  • ব্যাগে বহনের সময় ল্যাপটপে যেন চাপ না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কেননা এতে ডিসপ্লে নষ্ট হয়ে যাওয়া কিংবা দাগ পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

কম্পিউটারের স্থায়ীত্ব বাড়ানোর জন্য এবং এর কার্যকারিতা ঠিক রাখার জন্য এগুলো মেনে চলা উচিত। এতে কম্পিউটার যেমন ভালো থাকবে তেমনি ব্যবহারকারীও ঝামেলামুক্তভাবে কাজ করতে পারবে।

Content added By